নারায়ণগঞ্জ, প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডটি চনপাড়া শেখ রাসেল নগর ঘিরে। হত্যা, অপহরন, ভাড়াটে খুনি, মাদক, চাঁদাবাজি, পতিতাবৃত্তি, চোরাচালান, ছিনতাই, ডাকাতি, সুদের ব্যবসা, চুরিসহ হেন কোন অপকর্ম নেই যা এখানে সংঘটিত হয়না। মিছিল

সমাবেশে লোক ভাড়া থেকে শুরু করে রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আত্মগোপনের নিরাপদ আশ্রয় এ চনপাড়া শেখ রাসেল নগর । ইদানিং বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে।

বেড়ে গেছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। বিভিন্ন স্থানে হামলা ভাংচুর লুটপাটসহ আহতের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ছিন্নমূল মানুষদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হলেও গত ৪ দশকের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশয়ে এখানকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতাধর।এখানে যারা নিরীহ মানুষ রয়েছেন, তারা ওই সব অপরাধী ও ক্ষমতাধরদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।সয্য করেই নিরীহ মানুষ বসবাস করছেন। এই এলাকার মাসে অবৈধ আয় ১০ কোটি টাকা। রূপগঞ্জের কলঙ্কিত এক ভূখন্ডের নাম চনপাড়া শেখ রাসেল নগর । রূপগঞ্জবাসীর অভিমত, চনপাড়াকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারলেই গোটা রূপগঞ্জের চিত্র পাল্টে যাবে।

সর্বশেষ গতকাল রবিবার রাতে রূপগঞ্জ থানার একদল পুলিশ চিরুণি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে,খবর পেয়ে অপরাধীরা আগেই পালিয়ে গেছে। কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার আসে, সরকার যায়; সবাই চনপাড়া শেখ রাসেল নগর অপরাধ দমনে হয় ব্যর্থ। রাজধানীর মাত্র ৪ কিলোমিটারের মধ্যে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন এ চনপাড়া শেখ রাসেল নগর অবস্থান হওয়ায় রাজধানী ঢাকার অপরাধ জগতের অনেকেই এ শেখ রাসেল নগর কে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। ঘিঞ্চি বস্তির কারনে অপরাধীরা অপরাধ করে
এখানে দিনের পর দিন নির্বিঘ্নে পালিয়ে থাকতে পারে বলেই এ চনপাড়া শেখ রাসেল নগর তাদের এত পছন্দের। ওয়ান ইলিভেন,অপারেশন ক্লিনহার্ট ,র‌্যাবের ক্রস ফায়ার, পুলিশের
চিরুনি অভিযান কোন কিছুই এ চনপাড়া শেখ রাসেল নগরে প্রভাব পরে না।

এখানে রয়েছে সন্ত্রাস, মাদক, কিলার, নারী ব্যবসা ও ছিনতাইকারীদের একাধিক গ্রুপ । অপরাধের
পাশাপাশি রয়েছে অন্তহীন সমস্যা। আবার এক শ্রেণীর সমাজ সেবক ও ভালো মানুষদের আলোচ্ছটাও রয়েছে এখানে তবে এরা সংখ্যায় কম হওয়াতে অবধাত থেকে মুক্ত করতে পারছে না চনপাড়া শেখ রাসেল নগর কে । তাই আশপাশে মানুষ চনপাড়া শেখ রাসেল নগর কে কেউই ভাল চোখে দেখে না। মূলত চনপাড়া অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এ চনপাড়া শেখ রাসেলেন অবৈধভাবে মাসে আয় হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। অবৈধ ব্যবসার বদৌলতে এখানে রাতারাতি
কোটিপতি হয়েছে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি। এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে
সকল তথ্য বেরিয়ে আসবে। গত বছর জেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনী ৩ শ র‌্যাব
পুলিশের সদস্য নিয়ে চনপাড়া শেখ রাসেল নগরে এক ঝটিকা অভিযান চালায়। বর্তমানে
পুলিশের লোক দেখানো অভিযান চললেও অপরাধ দমনের প্রক্রিয়া অনেকটাই স্থবির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার বালু-শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষা ও
রাজধানীর ডেমরার শেষ মাথায় চনপাড়া। ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন সরকার
নদী ভাঙাভ‚মিহীনদের চনপাড়ায় ৮২৬ একর ওয়াসার জমির উপর পুনর্বাসন করেন।
প্রায় লাখ লোকের বসবাস এ চনপাড়ায়। চনপাড়ার শেখ রাসেল নগরে একাংশ হচ্ছে বেদে বহর।
এখানে ১০ বেদে নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে আজ কোটিপতি। অনুসন্ধানে
জানা যায়, এরা এক সময় সাপ খেলা দেখাতো। তাবিজ কবজ বিক্রি করতো,
একপর্যায়ে তারা মুক্তার ব্যবসা শুরু করে। ভারত থেকে তারা কৃত্রিম মুক্তা এনে বিক্রি
করতো। তাদের সিন্ডিকেট বড় হওয়ার সাথে সাথেই তারা কোবরার (সাপ) বিষের
চোরাচালানি ব্যবসায় নামে। মাদকস্পট, মলম পার্টি ও ছিনতাই গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছে এরা। এরা আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ছত্রছায়ায় রয়েছে।
চনপাড়ায় পেশাদার কিলার হিসেবে রয়েছে প্রায় ২০ জন। এ শেখ রাসেল নগরেম আসতো
নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী কামু, আনোয়ার। ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই
সাগর, মুরগি মিলন, পিচ্চি হান্নানসহ অনেকে। চনপাড়ায় পেশাদার পতিতা
রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। এসব পতিতা বিভিন্ন সময় ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে
জনসাধারণকে হুমকি দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি রাতে বসে জুয়ার আসর। এখানে নারী ও মদ নিয়ে ফুর্তি চলে। চনপাড়াকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এক শ্রেণীর সুদি মহাজন। এরা গরিবের রক্ত চুষে খাচ্ছে। সুদি মহাজনদের খপ্পরে পড়ে
অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছে। বর্তমানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে
গেছে। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মহসিনুল কাদির বলেন, অভিযান পরিচালনা করা
হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপরাধী ও মাদক কারবারীরা নৌ-পথসহ
বিভিন্ন কৌশলে পালিয়ে গেছে। তবে যে কোন সময় হঠ্যাৎ করেই অভিযান
চালানো হবে।